সাম্প্রদায়িকতা কে আমি শ্রদ্ধা করি। কেননা সাম্প্রদায়িকতা শুধু ধর্মীয়ভাবেই বিশ্লেষিত হয় না । যে কোন সমাজে, জাতিতে, সংস্কৃতিতে, সভ্যতায় তার মানুষগুলো তাদের আচার, ধর্ম, সংস্কৃতি, সমাজ, সংস্কার, স্বজাত্ব্যবোধে অতি মাত্রায় সচেতন থাকবে এটাই কাম্য। ধরেন যদি বাংলাদেশী হিসাবেই আমরা সাম্প্রদায়িক হতাম তবে আমরা এতটা পিছিয়ে থাকতাম না। আমি ধর্মীয়ভাবে সাম্প্রদায়িক কট্টরতা ও সাম্প্রদায়িক হানাহানির বিরুদ্ধে চরমপন্থী। আবার রাষ্ট্রিয় ভাবে একজন চরমপন্ত্রী সাম্প্রদায়িক বাঙালী ও বাংলাদেশী হিসাবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিরোধী সিদ্ধান্ত ধর্ম ভিত্তিক সংবিধান আমায় কষ্ট দেয়। "গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ" যেখানে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের এক গভীর সেতুবন্ধন রয়েছে। গণতন্ত্র একটি অতি আধুনিক রাষ্ট্রিয় কাঠামো ব্যবস্থা, আবার "Democracy is the road to socialism - Karl Marx" যা আমি বিশ্বাস করি। জাতিরপিতা আমাদের তাই গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র মিলিয়ে সেই ৭২ এই একটি অতি আধুনিক ও অন্যন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা উপহার দিয়েছিলেন যা ছিল সারা বিশ্বের বিশ্ময় । যে জীনতত্ত্বে রাষ্ট্রধর্ম বলে কিছুই ছিল না। আমাদের সংবিধান সেই ৭২ এই ছিল অতি আধুনিক একটি ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রিয় কাঠামো ব্যবস্থা। তারপর কি হল, বঙ্গবন্ধুকে আমরা হত্যা করলাম । অন্ধ্যকারের সম্রাট জিয়া নিষিদ্ধ ধৈর্মীয় রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করল বাংলাদেশে। তার আরো পরে আরেকটি কুলাঙ্গার সৈরাচারী এরশাদ রাষ্ট্রীয়ভাবে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করল। আমরা ফিরেগেলাম পাকিস্তানে, ফিরে গেলাম জিন্নার পথে। আবারো সভ্যতার আধুনিকতা থেকে আমরা চলেগেলাম সভ্যতার আদিম গহ্বরে । এখন ২০১৮ এখনো আমরা সেই সভ্যতার আদিম গুহা থেকে বেরুতে পারিনাই। হায় বাংলাদেশ! বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আমি এই বাংলাদেশে একটি অসাম্প্রদায়িকতার চারা বুনেছি, কখনো যদি এই চারা সংকটে পড়ে তবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে । এই অস্তিত্ব সংকটে পড়েথাকা ভালবাসার মাতৃভূমিকে নিয়ে আমি বেশ কষ্টেই আছি। না হলে আজ এগুলো লিখতাম না। আপনারা সবাই জানেন এইতো কিছুদিন আগেও নেপাল ছিল হিন্দু সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। কিন্তু অনেক দেরীতে হলেও নেপাল তার উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে তারা এতটা পরে হলেও মানুষ হতে পেরেছে, রাষ্ট্র ধর্ম তুলেদিয়ে তারা ধর্মীয়ভাবে অসাম্প্রদায়িক নেপাল হতে পেরেছে। তারা আদিম থেকে আধুনিক হয়েছে, আর আমরা সভ্যতার চরম আধুনিকতায় পৌছেও স্বেচ্ছায় আদিম গহ্বরে পুনঃরায় ফিরে গিয়েছি, আজও আছি। কেন আজ এগুলো লিখলাম বা বললাম জানেন? শুধুমাত্র এই একটি বিষয় দিন দিন আমাদের পৃথক করে দিয়েই চলেছে, কট্টরতায় চারিদিক নীলাভ হয়ে উঠেছে । তাইতো এখনো এদেশে অনেকেই পানি ও জলের ভেতর পার্থক্য খোজে, কোথায় আবার ভাই ও দাদার ভেতর । আবার তাদের ফেসবুক ওয়ালে গেলে দেখাযায় ৭২ এর সংবিধানের বাস্তবায়ন চাই! কি আজব আমরা তাই না পুত্র হয়ে পিতাকে মেরেছি, আবার নিজ হাতে নিজের জীনতত্ত্ব পাল্টে দিয়েছি। বলুন তো জেনম পাল্টালে কি আপনার অস্তিত্ব কে আপনি খুজে পাবেন? কিভাবে জন্মহল আপনার, তাই হবে অষ্টম আশ্চার্য। আপনি কি আপনার প্রশ্নবিদ্ধ জন্ম নিয়ে সুস্থ থাকতে পারবেন, কৈ আমি তো পারি না। এখন বুঝি একজন মুসলিম হয়েও কেন হুমায়ন আজাদ বলেছিলেন- "এদেশের মুসলমান এক সময় মুসলমান বাঙালি, তারপর বাঙালি মুসলামান, তারপর বাঙালি হয়েছিলো; এখন আবার তারা বাঙালি থেকে বাঙালি মুসলমান, বাঙালি মুসলমান থেকে মুসলমান বাঙালি, এবং মুসলমান বাঙালি থেকে মুসলমান হচ্ছে। পৌত্রের ঔরষে জন্ম নিচ্ছে পিতামহ।" বাংলাদেশের কোন সরকার কি কখনো দেশের মানুষের বিবর্তিত উদ্ভট কট্টর সাইকোলজি নিয়ে চিন্তিত হয়েছে? নাগরিকদের সাইকোলজিক্যাল অবক্ষয় নিয়ে গবেষণা করেছে? নানা কৈশলে অবক্ষয় থেকে সমাজ সংস্কারের চেষ্টা করেছে, সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট করেছে? আজ যারা বিশ্ব শাসন করছে, নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা সবাই তাদের দেশের হিউম্যান সাইকোলজি নিয়ে স্টাডি করে, ট্রিটমেন্টও দেয়। আমরা করিনাই, করছি না, তাই আজ মুক্তিযোদ্ধা অথবা আওয়ামীলীগ, অথবা অতি সাধারণ বাপের ছেলেরা জঙ্গীতে পরিণত হচ্ছে। আমার কষ্ট লাগে কারণ কিছু কিছু মানুষ আমাকে মাঝে মাঝে এমন ভাবে তাচ্ছিল্য, কটাক্ষ করে যেমন কটাক্ষ কখনো কোন বাঙালী, বাংলাদেশীরা ওই বিহারী ক্যাম্পের বিজাতি পাকিদেরকেউ করেনাই। এই দেশ আমার, এই মাটি আমার, কোন কোন ক্ষেত্রে এই মাটিতে আমার অস্তিত্বের অবস্থানের দলিল তাদের অনেকের অস্তিত্বকেউ প্রশ্নবিদ্ধ করবে। তবুও আমি আমার মাটিতেই তাচ্ছিল্যের বস্তু ওই বিহারীরাও আমার চাইতে উপরের স্তরের বাঙালী ও বংলাদেশী। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা । তারপরেও আমি ১ম শ্রেণীর নাগরিক নয়। কেন, কিভাবে, কোন শর্ত বলে? হিসাব একটাই রাষ্ট্রধর্ম। একটি সাধারণ জ্ঞ্যানের প্রশ্ন করি - বলেন তো বাংলাদেশের জন্মের মূল ভিত্তিগুলো বা জীনতত্ত্ব টা কি? না জানলে বলেদেই-----
১) গণতন্ত্র ২) সমাজতন্ত্র ৩) জাতীয়তাবাদ ৪) ধর্ম নিরপেক্ষতা। যে চারপায়া চেয়ারের উপর জাতির অবস্থান ছিল, বাঙালী ও বাঙালীত্বের মেরুদন্ড ছিল তার এক পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে, তিনপায়া চেয়ারে বসা জাতি পড়েযেয়ে মেরুদন্ড ভেঙে ফেলবে, বিভ্রান্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। তবুও লড়াই করছি, মৃত্য অবধী শেখের বেটির সাথে লড়েই যাব, কেননা এই তিনপায়া চেয়ারের আরেকটি পা যদি কেউ একজন ফিরিয়ে দিতে পারে সে বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনা। "মানুষ বাচে আশায়, দেশ বাচে ভালবাসায়"। আজ আমাদের ভালবাসা এতটাই প্রবল হয়েছে যে শেখ হাসিনা ব্যাতিত আর একজনকেউ খুজে পাওয়া যায় না, যার দ্বারা চারপায়া চেয়ারের ভেঙে দেওয়া একপায়া আবারো জোরা লাগানোর আশ্বাস পাওয়া সম্ভব। তিনপায়া চেয়ারে বসে এ এক উদ্ভট জাতি এগিয়ে চলছে বিভ্রান্তির পথে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন